বনজ সম্পদের ব্যবহার
বাংলাদেশে বনজ সম্পদের ব্যবহার বহুমুখী এবং বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বন থেকে প্রাপ্ত উপকরণগুলোকে দেশজ প্রয়োজনীয়তা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানির মাধ্যমেও অর্থনীতির বিকাশে কাজে লাগানো হয়।
প্রধান বনজ সম্পদের ব্যবহার:
১. কাঠ ও কাঠজাত পণ্য:
নির্মাণ কাজে: কাঠ ভবন, সেতু এবং অন্যান্য কাঠামো নির্মাণে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি গৃহনির্মাণ, ফার্নিচার এবং আসবাবপত্র তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ।
আসবাবপত্র শিল্প: আসবাবপত্র, যেমন টেবিল, চেয়ার, খাট এবং অন্যান্য ফার্নিশিং সামগ্রী তৈরি করতে কাঠ ব্যবহৃত হয়। এটি বাংলাদেশের একটি বড় শিল্পখাত।
কাগজ উৎপাদন: কাঠের আঁশ থেকে কাগজ তৈরি করা হয়, যা শিক্ষাক্ষেত্র এবং অফিসিয়াল কাজে ব্যবহৃত হয়।
২. বাঁশ ও বেত:
- বাঁশ এবং বেত বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প এবং গৃহস্থালির সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে আছে ঝুড়ি, ঝালর, আসবাবপত্র ইত্যাদি। বাঁশ গৃহনির্মাণ এবং সাঁকো তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়।
৩. জ্বালানি কাঠ:
গ্রামীণ এলাকায় রান্না ও অন্যান্য দৈনন্দিন কাজে জ্বালানি কাঠ ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এবং চা শ্রমিকরা এর ওপর নির্ভরশীল।
৪. ঔষধি গাছপালা:
বিভিন্ন ঔষধি গাছ যেমন নিম, অর্জুন, তুলসি, বকুল ইত্যাদি আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি এবং প্রাকৃতিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এগুলো রপ্তানিও করা হয়।
৫. রজন এবং লাক্ষা:
গাছের রজন থেকে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ, সাবান এবং প্রসাধনী দ্রব্য উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। লাক্ষা (এক ধরনের রজনজাত পণ্য) দিয়ে বার্নিশ ও রং তৈরি করা হয়।
৬. মধু ও মোম:
সুন্দরবন এবং অন্যান্য বনাঞ্চল থেকে প্রাপ্ত মধু দেশের ভেতরে এবং বাইরে রপ্তানির জন্য ব্যবহৃত হয়। মোম বিভিন্ন শিল্পে, বিশেষ করে মোমবাতি ও প্রসাধনীতে ব্যবহৃত হয়।
৭. ফলমূল ও খাদ্যদ্রব্য:
বনাঞ্চল থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন ধরনের ফল যেমন আম, জাম, কাঁঠাল ইত্যাদি স্থানীয় চাহিদা মেটায়। অনেক বনজ ফল ও শাকসবজি পুষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
৮. বন্যপ্রাণী ও পর্যটন:
বনাঞ্চল থেকে প্রাপ্ত বন্যপ্রাণী যেমন হরিণ, বন্য শুকর ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া, সুন্দরবনের মতো বনাঞ্চল পর্যটন শিল্পে বড় ভূমিকা রাখে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে।
৯. কার্বন শোষণ:
বনভূমি জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন উন্নত দেশ কার্বন ক্রেডিট কেনার মাধ্যমে বাংলাদেশের বনভূমির কার্বন শোষণকে অর্থনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে পারে।
১০. মাটির ক্ষয়রোধ এবং পরিবেশগত ভারসাম্য:
বনভূমি মাটির ক্ষয় প্রতিরোধ করে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশকে সুরক্ষিত রাখে। এভাবে বন পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রেখে দেশের অর্থনীতিকে পরোক্ষভাবে সহায়তা করে।
বন
জ সম্পদের সঠিক ও টেকসই ব্যবহার বাংলাদেশের পরিবেশ ও অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নে সহায়ক। তবে অতি-ব্যবহার এবং অবৈধ বন কাটার কারণে বনজ সম্পদের হ্রাস একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বন সংরক্ষণ ও পুনরায় বনায়নের মাধ্যমে এ সম্পদের টেকসই ব্যবহারের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।
See More.........................

0 Comments