আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের সূচনা

 আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের সূচনা




আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সূচনা উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ঘটে, যখন ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞানের কিছু সীমাবদ্ধতা এবং অসংগতির কারণে নতুন নতুন তত্ত্ব ও ধারণার বিকাশ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। বিশেষত তাপ, আলো, তড়িৎচুম্বকত্ব এবং পরমাণুর আচরণ নিয়ে গবেষণার সময় দেখা দেয় যে, ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো (নিউটনের গতি সূত্র, ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎ-চুম্বকত্ব তত্ত্ব) সব পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য নয়।

 আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সূচনা এবং প্রধান ঘটনাবলী:

1. কোয়ান্টাম তত্ত্বের উদ্ভব (1900):

 জার্মান পদার্থবিদ ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক (Max Planck) তাঁর ব্ল্যাকবডি রেডিয়েশন তত্ত্বে বলেন যে, শক্তি নিরবচ্ছিন্নভাবে নয় বরং কোয়ান্টা (প্যাকেট) আকারে নির্গত বা শোষিত হয়। এটি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ভিত্তি স্থাপন করে এবং আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

2. আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্ব (1905):

আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্ব উপস্থাপন করেন, যেখানে তিনি আলো ও গতির সম্পর্ক এবং ভর-শক্তির সমীকরণ \(E=mc^2\) প্রদান করেন। এটি পদার্থবিজ্ঞানে একটি বিপ্লব ঘটায়।

পরবর্তীতে ১৯১৫ সালে তিনি সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্ব উপস্থাপন করেন, যা মহাকর্ষকে ব্যাখ্যা করে।

3. কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিকাশ (1920-এর দশক):

নিলস বোর (Niels Bohr) পরমাণুর গঠন এবং ইলেকট্রনের শক্তিস্তর তত্ত্ব দেন, যা আধুনিক কোয়ান্টাম মেকানিক্সের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ভার্নার হাইজেনবার্গ (Werner Heisenberg) এর অনিশ্চয়তা নীতি এবং এরউইন শ্রোডিঙ্গার (Erwin Schrödinger) এর তরঙ্গ সমীকরণ কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে পূর্ণতা দেয়।

4. পারমাণবিক এবং সাব-অ্যাটোমিক কণার আবিষ্কার:

 আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান সাব-অ্যাটোমিক কণা যেমন ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন এবং কোয়ার্ক নিয়ে গবেষণা করে। এর মাধ্যমে পারমাণবিক শক্তি ও নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের উন্নতি ঘটে।

 ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞান বনাম আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান:

ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞান: ম্যাক্রোস্কোপিক জগৎ নিয়ে আলোচনা করে, যেখানে নিউটনের গতি সূত্র এবং ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎ-চুম্বকত্ব তত্ত্ব প্রযোজ্য।

আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান: মাইক্রোস্কোপিক (পরমাণু ও তার চেয়ে ক্ষুদ্র কণা) এবং উচ্চগতির বস্তু নিয়ে আলোচনা করে, যেখানে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্ব কাজ করে।

এই সমস্ত তত্ত্ব ও আবিষ্কার আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং এর মাধ্যমে মহাবিশ্ব ও পদার্থের গভীর তত্ত্ব ও নীতি উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে।







Post a Comment

0 Comments