সূরা কাউসার আরবি
সূরা কাউসার আরবি
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِي
إِنَّآ أَعْطَيْنَٰكَ ٱلْكَوْثَرَ
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنْحَرْ
إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ ٱلْأَبْتَرُ
সূরা কাওসার বাংলা উচ্চারণ।
ইন্না আ’তাইনা-কাল কাওছার।
ফাসালিল লিরাব্বিকা ওয়ানহার।
ইন্না শা-নিআকা হুওয়াল আবতার।
সূরা কাসার বাংলা অর্থসহ অনুবাদ
নিশ্চয় আমি আপনাকে কাওসার দান করেছি।
অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানী করুন।
যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বংশ।
সূরা কাউসার এর শানে নুযুল
মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে হোসাইন থেকে বর্ণিত, তৎকালীন আরবে যে ব্যক্তির পুত্রসন্তান মারা যেতো তাকে “আব্তার্” বা নির্বংশ বলা হতো। হযরত মুহাম্মদ (স) এর পুত্র কাসেম অথবা ইবরাহীম শৈশবে মারা যাওয়ার পর কাফেররা নবীজিকে নির্বংশ বলে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে উপহাস করত। তাদের মধ্যে ‘আস ইবনে ওয়ায়েল’র নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তার সামনে রাসুলুল্লাহ্ (সা.) এর কোনও আলোচনা হলে সে বলত, আরে তার কথা বাদ দাও, সে তো কোনও চিন্তারই বিষয় নয়। কারণ, সে নির্বংশ। তার মৃত্যু হয়ে গেলে তার নাম উচ্চারণ করারও কেউ থাকবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে সূরা কাউসার অবতীর্ণ হয় ইবনে। (ইবনে কাসির, মাযহারি)।
সূরা কাউসার এর ফজিলত
সূরা কাউসার হলো দোজাহানের অফুরন্ত কল্যাণের সুখবর প্রদানকৃত সুরা! এই সূরার মাধ্যমে হাউজে কাউসার সম্পর্কে জানা যায়, যা কিয়ামতের ময়দানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে প্রদান করা হবে। যে মুহূর্তে সূরা আল কাউসার নাজিল হয় সে মুহূর্তে সাহাবায়ে কেরামগণ নবীজির চেহরা মোবারকে হাসির নূরানি ঝটা দেখতে পান ।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, ‘কাউসার’ হলো সেই অজস্র কল্যাণ যা আল্লাহ তায়ালা তার হাবীব কে দান করেছেন। কাউসার জান্নাতের একটি প্রস্রবণের নাম। সহিহ হাদিস শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে যে, ‘ইহা একটি নহর যা বেহেশতে নবী (সা.)-কে দান করা হবে।’
হজরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদিন মসজিদে নবীজি (সাঃ) আমাদের সামনে উপস্থিত হলেন। হঠাৎ মহানবীর (সা.) মাঝে তন্দ্রা অথবা একধরনের অচেতনতার ভাব দৃশ্যমান হলো। এরপর নবীজি (সা.) হাসিমুখে মস্তক উত্তোলন করলেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার হাসির কারণ কী?’ তিনি বললেন, ‘এই মুহূর্তে আমার নিকট একটি সূরা অবতীর্ণ হয়েছে’।
অতঃপর তিনি বিসমিল্লাহসহ সূরা কাউসার পাঠ করলেন এবং বললেন, ‘তোমরা জান, কাউসার কী?’ আমরা বললাম, ‘আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন’। তিনি বললেন, ‘এটা জান্নাতের একটি নহর। আমার পালনকর্তা আমাকে এটা দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন। এতে অজস্র কল্যাণ আছে এবং এই হাউজে কেয়ামতের দিন আমার উম্মত পানি পান করতে যাবে। এর পানি পান করার পাত্র সংখ্যা আকাশের তারকাসম হবে।
তখন কতক লোককে ফেরেশতাগণ হাউজ থেকে হটিয়ে দেবে। আমি বলবো, পরওয়ারদেগার, সে তো আমার উম্মত। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, আপনি জানেন না, আপনার পরে সে কী নতুন মত ও পথ অবলম্বন করেছিল?’ (হাদিসে সহিহ বোখারি, মুসলিম শরিফ, আবু দাউদ, নাসায়ী)।
সূরা কাওসার এর শিক্ষা
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। সূরা আল কাউসারে আল্লাহর তাওহীদ তথা একত্ববাদের বাণী এসেছে। আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর শরীক না করার কথা পবিত্র কোরআনে বারবার এসেছে। সূরা কাউসারেও এ সম্পর্কিত নির্দেশ এসেছে। সূরা কাউসারের দ্বিতীয় আয়াতে এই নির্দেশ এবং একইসঙ্গে আল্লাহা তায়ালার উদ্দ্যেশ্যে কোরবানি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তৃতীয় আয়াত যেসব কাফের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে নির্বংশ বলে দোষারোপ করত তাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। অধিকাংশ রেওয়ায়েত মতে এই আয়াতে,‘আস ইবনে ওয়ায়েল এবং কোনো কোনো রেওয়ায়েত মতে ওকবা এবং কোনো কোনো রেওয়ায়েত মতে, কা’ব ইবনে আশরাফকে বোঝানো হয়েছে।
সুরা কাউসার আকারে ছোট হলেও এই সুরাটি প্রভুত কল্যাণকর সুরা। এই সুরার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তার পেয়ারা নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)কে জান্নাতে নাহার দান করার বিষয়ে অঙ্গীকার করেছেন। তাছাড়া কাফেররা নবীজীকে পূত্র সন্তান মারা যাওয়ার কারণে নির্বংশ বলে যে উপহাস বা ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো তার যথার্থ জবাব মহান আল্লাহ তায়ালা এই সুরা নাযিলের মাধ্যমে প্রদান করেছেন।
তাই আসুন আমরা এই সুরার যথাযথ ভাবার্থ অনুধাবন করে অর্থসহ তেলাওয়াত করি এবং সে অনুযায়ী আমল করি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন । আমিন।।
আরো বিস্তারিত পড়তে....................

0 Comments