সূরা আর রহমান ( আয়াত নং - ৫১ এর তাফসীর )

 

সূরা আর রহমান ( আয়াত নং - ৫১ এর তাফসীর )


فَبِاَیِّ اٰلَآءِ رَبِّکُمَا تُکَذِّبٰنِ

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নি‘আমতকে অস্বীকার করবে?

 তাফসীরে মাআ’রিফুল কুরআনঃ 

(আলোচ্য আয়াতসমূহে  وَلِمَنْ خَافَ ,থেকে দুটি উদ্যানের এবং وَمِنْ دُونِهِمَا থেকে দুটি উদ্যানের উল্লেখ আছে। প্রথমোক্ত উদ্যানন্বয় বিশেষ নৈকট্যশীলদের জন্য এবং শেষোক্ত উদ্যানদ্বয় সাধারণ মু’মিনদের জন্য। এর প্রমাণ পরে বর্ণিত হবে। এখানে শুধু তফসীর লেখা হচ্ছে। পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে অপরাধীদের শাস্তি বর্ণিত হয়েছিল। এখান থেকে সৎকর্মপরায়ণ মু’মিনদের প্রতিদান বর্ণনা করা হচ্ছে। জান্নাতীগণ দুই ভাগে বিভক্ত-বিশেষ শ্রেণী ও সাধারণ শ্রেণী। অতএব ) যে, ব্যক্তি (বিশেষ শ্রেণীর এবং) তার পালনকর্তার সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার (সর্বদা) ভয় রাখে। ( এবং ভয় রেখে কুপ্রবৃত্তি ও পাপকর্ম থেকে বিরত থাকে, এটা বিশেষ শ্রেণীরই অবস্থা। কারণ সাধারণ শ্রেণী মাঝে মাঝে ভয় রাখে এবং মাঝে মাঝে পাপকর্মও করে ফেলে, যদিও তওবা করে নেয়। মোটকথা যে ব্যক্তি এরূপ আল্লাহভীরু) তার জন্য (জান্নাতে) দুটি উদ্যান রয়েছে। (অর্থাৎ প্রতিজনের জন্য দুটি উদ্যান। এই একাধিক উদ্যান থাকার রহস্য সম্ভবত তাদের সম্মান ও বিশেষ মর্যাদা প্রকাশ করা। যেমন দুনিয়াতে ধনীদের কাছে অধিকাংশ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ একাধিক হয়ে থাকে)। অতএব হে জিন ও মানব! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার (এত অধিক অবদানের মধ্য থেকে) কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? উভয় উদ্যানই ঘন শাখা-পল্লববিশিষ্ট হবে। (এতে ছায়ার ঘনত্ব ও ফল-ফুলের প্রাচুর্যের দিকে ইঙ্গিত আছে)। অতএব হে জিন ও মানব! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ( এত অধিক অবদানের মধ্য থেকে) কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? উভয় উদ্যানে থাকবে প্রবহমান দুই প্রস্রবণ। অতএব হে জিন ও মানব! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার (এত অধিক অবদানের মধ্য থেকে) কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? উভয়ের মধ্যে প্রত্যেক ফলের দুই প্রকার হবে। (এতে অধিক স্বাদ গ্রহণের সুযোগ আছে)। অতএব হে জিন ও মানব! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার (এত অধিক অবদা নের মধ্য থেকে) কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? তারা তথায় রেশমের আস্তর বিশিষ্ট বিছানায় হেলান দিয়ে বসবে। (নিয়ম এই যে, উপরের কাপড় আস্তরের তুলনায় উৎকৃষ্ট হয়। আস্তরই যখন রেশমের, তখন উপরের কাপড় কেমন হবে অনুমান করা যায়)। উভয় উদ্যানের ফল তাদের নিকট ঝুলবে। (ফলে দণ্ডায়মান, উপবিষ্ট, শায়িত সর্বাবস্থায় অনায়াসে ফল হাতে আসবে)। অতএব হে জিন ও মানব! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার (এত অধিক অবদানের মধ্য থেকে ) কোন্ কোন্ অবদানকে অস্বীকার করবে? তথায় (অর্থাৎ উদ্যানের প্রাসাদসমূহে) আনতনয়না রমণিগণ (অর্থাৎ হুরগণ) থাকবে, যাদেরকে তাদের (অর্থাৎ এই জান্নাতীদের) পূর্বে কোন জিন ও মানব ব্যবহার করেনি (অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে অব্যবহৃতা হবে)। অতএব হে জিন ও মানব! তোমরা তোমা দের পালনকর্তার (এত অধিক অবদানের মধ্য থেকে) কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? (তাদের রূপলাবন্য এত পরিষ্কার ও স্বচ্ছ হবে) যেন তারা প্রবাল ও পদ্মরাগ। অতএব হে জিন ও মানব! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার (এত অধিক অবদানের মধ্য থেকে) কোন্ কোন্ অবদানকে অস্বীকার করবে? (অতঃপর উল্লিখিত বিষয়বস্তুকে জোরদার করার জন্য বলা হচ্ছে :) সৎ কাজের প্রতিদান উত্তম পুরস্কার ব্যতীত আর কি হতে পারে? (তারা চূড়ান্ত অনুগত্য করেছে, তাই পুরস্কারও চূড়ান্ত পেয়েছে)। অতএব হে জিন ও মানব। তোমরা তোমাদের পালনকর্তার (এত অধিক অবদানের মধ্য থেকে) কোন্ কোন্ অবদানকে অস্বীকার করবে? (এ হচ্ছে বিশেষ শ্রেণীর জান্নাতীদের উদ্যানের অবস্থা। এখন সাধারণ মু’মিনদের উদ্যান বর্ণিত হচ্ছে) এই দুটি উদ্যান ছাড়া নিম্নস্তরের আরও দুটি উদ্যান রয়েছে। (প্রত্যেক সাধারণ মু’মিন দু দুটি করে পাবে। অতএব হে জিন ও মানব! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার (এত অধিক অবদানের মধ্য থেকে) কোন্ কোন্ অবদানকে অস্বীকার করবে? উভয় উদ্যান ঘন সবুজ হবে। অতএব হে জিন ও মানব! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার (এত অধিক অবদানের মধ্য থেকে) কোন্ কোন্ অবদানকে অস্বীকার করবে? উভয় উদ্যানে থাকবে উত্তাল দুই প্রস্রবণ। অতএব হে জিন ও মানব! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার (এত অধিক অবদানের মধ্য থেকে) কোন্ কোন্ অবদানকে অস্বীকার করবে? (উত্তাল হওয়া প্রস্রবণের স্বভাব। উপরের প্রস্রবণেরও একই অবস্থা। সেখানে অতিরিক্ত تجريان বহমানও বলা হয়েছে। সুতরাং এটা ইঙ্গিত যে, এই প্রস্রবণ বহমান হওয়ার ব্যাপারে প্রথমোক্ত প্রস্রবণ দ্বয়ের চাইতে কম এবং এই উদ্যানদ্বয় সেই উদ্যানদ্বয়ের চাইতে নিম্নস্তরের)। উভয় উদ্যানে আছে ফল-মূল খজুর ও আনার। অতএব হে জিন ও মানব! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার (এত অধিক অবদানের মধ্য থেকে) কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? সেখানে (অর্থাৎ সেখানকার প্রাসাদসমূহে) থাকবে সুশীলা, সুন্দরী রমণিগণ। (অর্থাৎ হুরগণ) অতএব হে জিন ও মানব! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ( এত অধিক অবদানের মধ্য থেকে) কোন্ কোন্ অবদানকে অস্বীকার করবে? তাঁবুতে সংরক্ষিতা লাবণ্যময়ী রমণিগণ। অতএব হে জিন ও মানব! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার (এত অধিক অবদানের মধ্য থেকে) কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? এই জান্নাতীদের পূর্বে কোন জিন ও মানব তাদেরকে ব্যবহৃত করেনি (অর্থাৎ অব্যবহৃতা হবে)। অতএব হে জিন ও মানব! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার (এত অধিক অবদানের মধ্য থেকে) কোন্ কোন্ অবদানকে অস্বীকার করবে? (সেখানে রমণিগণকে প্রবাল ও পদ্মরাগের সাথে তুলনা করা এবং এখানে শুধু حسان সুন্দরী বলা এ থেকেও বোঝা যায় যে, প্রথমোক্ত উদ্যানদ্বয় শেষোক্ত উদ্যানদ্বয়ের চাইতে শ্রেষ্ঠ) তারা সবুজ মসনদে এবং উৎকৃষ্ট মূল্যবান বিছানায় হেলান দিয়ে বসবে। অতএব হে জিন ও মানব! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার (এত অধিক অবদানের মধ্য থেকে) কোন্ কোন্ অবদানকে অস্বীকার করবে? ( চিন্তা করলে বোঝা যায় যে, এই উদ্যানদ্বয়ের বিছানা প্রথমোক্ত উদানিদ্বয়ের তুলনায় নিম্নস্তরের হবে। কেননা, সেখানে রেশমের ও আস্তরবিশিষ্ট হওয়ার কথা আছে, এখানে নেই। অতঃপর পরিশেষে আল্লাহ্ তা’আলার প্রশংসা ও গুণ বর্ণিত হয়েছে। এতে সূরা আর-রহমানে বিশদভাবে বর্ণিত বিষয়সমূহের সমর্থন ও তাকীদ আছে )। কত পুণ্যময় আপনার পালনকর্তার নাম যিনি মহিমময় ও মহানুভব (নাম বলে গুণাবলী বোঝানো হয়েছে, যা সত্তা থেকে ভিন্ন নয়। কাজেই এই বাক্যের সারমর্ম হচ্ছে সত্তা ও গুণাবলী দ্বারা প্রশংসা)

  পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা ছিল। এর বিপরীতে আলোচা আয়াতসমূহে সৎ কর্মপরায়ণ মু’মিনদের উত্তম প্রতিদান ও অবদান বর্ণনা করা হচ্ছে। তন্মধ্যে জান্নাতীদের প্রথমোক্ত দুই উদ্যান ও তার অবদানসমূহ এবং শেষোক্ত দুই উদ্যান ও তাতে সরবরাহকৃত অবদানসমূহ বর্ণিত হয়েছে ।

    প্রথমোক্ত দুই উদ্যান কাদের জন্য, একথা وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ আয়াতে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ তারা এই দুই উদ্যানের অধিকারী হবে, যারা সর্বদা ও সর্বাবস্থায় কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলার সামনে উপস্থিত হওয়ার ও হিসাব-নিকাশ দেওয়ার ভয়ে ভীত থাকে। ফলে তারা কোন পাপকর্মের কাছেও যায় না। বলা বাহুল্য, এ ধরনের লোক বিশেষ নৈকট্যশীলগণই হতে পারে।

    শেষোক্ত দুই উদ্যানের অধিকারী কারা হবে, এ সম্পর্কে আলোচ্য আয়াতসমূহে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু একথা বলে দেওয়া হয়েছে যে, এই দুই উদ্যান প্রথমোক্ত দুই উদ্যানের তুলনায় নিম্নস্তরের হবে। وَمِنْ دُونِهِمَا جَنَّتَانِ অর্থাৎ পূর্বোক্ত দুই উদ্যানের তুলনায় নিম্নস্তরের আরও দুটি উদ্যান রয়েছে। এ থেকে জানা যায় যে, এই উদ্যানদ্বয়ের অধিকারী হবে সাধারণ মু’মিনগণ, যারা মর্যাদায় নৈকট্যশীলদের চেয়ে কম।

     প্রথমোক্ত ও শেষোক্ত উদ্যানদ্বয়ের তফসীর প্রসঙ্গে তফসীরবিদগণ আরও অনেক উক্তি করেছেন। কিন্তু হাদীসের আলোকে উপরোক্ত তফসীরই অগ্রগণ্য মনে হয়। কেননা দুররে মনসুরের বরাত দিয়ে বয়ানুল কোরআনে এই হাদীস বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ (সা)  وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ এবং وَمِنْ دُونِهِمَا جَنَّتَانِ আয়াতের তফসীর প্রসঙ্গে বলেছেন: جنتان من ذهب للمقربين، وجنتان من ورق لأصحاب اليمين  অর্থাৎ স্বর্ণনির্মিত দুই উদ্যান নৈকট্যশীলদের জন্য এবং রৌপ্য নির্মিত দুই. উদ্যান সাধারণ সৎ কর্মপরায়ণ মু’মিনদের জন্য। এছাড়া ’দুররে মনসুরে’ হযরত বারা ইবনে আযেব থেকে বর্ণিত আছেঃ العينان التي تجريان خير من النضاختان অর্থাৎ প্রথমোক্ত দুই উদ্যানের দুই প্রস্রবণ, যাদের সম্পর্কে تجريان তথা বহমান বলা হয়েছে, শেষোক্ত দুই উদ্যানের প্রস্রবণ থেকে উত্তম, যাদের সম্পর্কে نضاختان তথা উত্তাল বলা হয়েছে। কেননা প্রস্রবণ মাত্রই উত্তাল হয়ে থাকে। কিন্তু যে প্রস্রবণ সম্পর্কে বহমান বলা হয়েছে, তার মধ্যে উত্তাল হওয়া ছাড়াও দূর পর্যন্ত প্রবাহিত হওয়ার গুণটি অতিরিক্ত। 

     এ হচ্ছে প্রস্রবণ চতুষ্টয়ের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, যেগুলো জান্নাতীগণ লাভ করবে। এখন আয়াতের ভাষা ও অর্থ দেখুন :

وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ

অধিকাংশ তফসীরবিদের মতে مَقَامَ رَبِّ বলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলার সামনে হিসাবের জন্য উপস্থিতি বোঝানো হয়েছে। এই উপস্থিতির ভয় রাখার অর্থ এই যে, জনসমক্ষে ও নির্জনে, প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বাবস্থায় এই ধ্যান থাকা যে, আমাকে একদিন আল্লাহ তা’আলার সামনে উপস্থিত হতে হবে এবং ক্রিয়া কর্মের হিসাব দিতে হবে। বলা বাহুল্য, যে ব্যক্তির সদাসর্বদা এরূপ ধ্যান থাকবে, সে পাপ কর্মের কাছে যাবে না।

    কুরতুবী প্রমুখ কোন কোন তফসীরবিদ مَقَامَ رَبِّ এর এরূপ তফসীরও করেছেন যে, আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের প্রত্যেক কথা ও কাজ এবং গোপন ও প্রকাশ্য কর্ম দেখাশুনা করেন। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ তার দৃষ্টির সামনে। আল্লাহ্ তা’আলার এই ধ্যানও মানুষকে পাপ কর্ম থেকে বাঁচিয়ে দেবে।

ذَوَاتَا أَفْنَانٍ

এটা প্রথমোক্ত দুই উদ্যানের বিশেষণ। অর্থাৎ উদ্যানদ্বয় ঘন শাখাপল্লব বিশিষ্ট হবে। এর অবশ্যম্ভাবী ফল এই যে, এগুলোর ছায়াও ঘন ও সুনিবিড় হবে এবং ফলও বেশী হবে। পরবর্তীতে উল্লিখিত উদ্যানদ্বয়ের ক্ষেত্রে এই বিশেষণ উল্লেখ করা হয়নি। ফলে সেগুলোর মধ্যে এ বিষয়ের অভাব বোঝা যায়।

فِيهِمَا مِنْ كُلِّ فَاكِهَةٍ زَوْجَانِ

প্রথমোক্ত উদ্যানদ্বয়ের বিশেষণে مِنْ كُلِّ فَاكِهَةٍ বলে ব্যক্ত করা হয়েছে যে, এগুলোতে সর্বপ্রকার ফল থাকবে। এর বিপরীতে শেষোক্ত উদ্যানদ্বয়ের বর্ণনায় শুধু فَاكِهَةٍ বলা হয়েছে। زَوْجَانِ --এর অর্থ এই যে, প্রত্যেক ফলের দুটি করে প্রকার হবে---শুষ্ক ও আর্দ্র। অথবা সাধারণ স্বাদযুক্ত ও অসাধারণ স্বাদ যুক্ত।—(মাযহারী)

طمث - لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنْسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ

শব্দটি একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হয়। এর এক অর্থ হায়েযের রক্ত। যে নারীর হায়েয হয়, তাকে طامث বলা হয়।কুমারী বালিকার সাথে সহবাসকেও طمث বলা হয়।এখানে এই অর্থই বোঝানো হয়েছে। আয়াতের দ্বিবিধ অর্থ হতে পারে। এক. যেসব রমণী মানুষের জন্য নির্ধারিত, তাদেরকে ইতিপূর্বে কোন মানুষ এবং যেসব রমণী জিনদের জন্য নির্ধারিত তাদেরকে ইতিপূর্বে কোন জিন স্পর্শ করেনি। দুই. দুনিয়াতে যেমন মাঝে মাঝে মানব নারীদের উপর জিন ভর করে বসে, জান্নাতে এরূপ কোন আশংকা নেই।

هَلْ جَزَاءُ الْإِحْسَانِ إِلَّا الْإِحْسَانُ

নৈকট্যশীলদের উদ্যানদ্বয়ের কিছু বিবরণ পেশ করার পর ইরশাদ হয়েছে যে, সৎ কর্মের প্রতিদান উত্তম পুরস্কারই হতে পারে, এছাড়া অন্য কোন সম্ভাবনা নেই। তারা সর্বদা সৎ কর্ম পালন করেছে, কাজেই আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকেও তাদেরকে উত্তম পুরস্কার দেওয়া উচিত ছিল, যা দেওয়া হয়েছে।

مُدْهَامَّتَانِ

ঘন সবুজের কারণে যে কাল রঙ দৃষ্টিগোচর হয়, তাকে ادهمام বলা হয়। অর্থাৎ এই উদ্যানদ্বয়ের ঘন সবুজতা এদের কালোমত হওয়ার কারণ হবে। প্রথমোক্ত উদ্যানদ্বয়ের ক্ষেত্রে এই বিশেষণ উল্লেখ করা হয়নি বটে, কিন্তু ذَوَاتَا أَفْنَانٍ –বিশেষণে এই বিশেষণও শামিল আছে ।

خَيْرَاتٌ - فِيهِنَّ خَيْرَاتٌ حِسَانٌ

এর অর্থ চারিত্রিক দিক দিয়ে সুশীলা এবং حِسَانٌ -এর অর্থ দেহাবয়বের দিক দিয়ে সুন্দরী। উভয় উদ্যানের রমণিগণ সমভাবে এই বিশেষণে বিশেষিতা হবে।

رَفْرَفٍ - مُتَّكِئِينَ عَلَى رَفْرَفٍ خُضْرٍ وَعَبْقَرِيٍّ حِسَانٍ

এর অর্থ সবুজ রঙের রেশমী বস্ত্র।-~~(কামূস ) এর দ্বারা বিছানা, বালিশ ও অন্যান্য বিলাসসামগ্রী তৈরী করা হয়। সিহাহ গ্রন্থে আছে, এর উপর বৃক্ষ ও ফুলের কারুকার্য করা হয়। عَبْقَرِيٍّ এর অর্থ সুশ্রী ও উৎকৃষ্ট বস্ত্র।

تَبَارَكَ اسْمُ رَبِّكَ ذِي الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ 

সূরা আর-রহমানে বেশীর ভাগ আল্লাহ্ তা’আলার অবদান ও মানুষের প্রতি অনুগ্রহ বর্ণিত হয়েছে। উপসংহারে সার-সংক্ষেপ হিসাবে বলা হয়েছে : আল্লাহর পবিত্র সত্ত্বা অনন্য। তাঁর নামও খুব গুণাময়। তাঁর নামের সাথেই এসব অবদান কায়েম ও প্রতিষ্ঠিত আছে।


Post a Comment

0 Comments