হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে
হিসাববিজ্ঞান (Accounting) হল একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের নথিভুক্তকরণ, বিশ্লেষণ এবং প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এটি ব্যবসার আর্থিক অবস্থার সঠিক চিত্র প্রদান করে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে। হিসাববিজ্ঞান মূলত তিনটি প্রধান ধাপে বিভক্ত: আর্থিক লেনদেন নথিভুক্তকরণ (Recording), সেগুলোর শ্রেণীবিন্যাস (Classifying), এবং আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি (Summarizing)।
হিসাববিজ্ঞান নিম্নলিখিত কাজগুলো করে:
1. ব্যবসার আয় ও ব্যয় নির্ধারণ করা।
2. প্রতিষ্ঠানের সম্পদ, দায় এবং মালিকের মূলধনের পরিমাণ হিসাব করা।
3. আর্থিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লাভ-ক্ষতির হিসাব প্রদান করা।
4. কর প্রদান ও অন্যান্য আইনি প্রয়োজনীয়তা পূরণে সহায়তা করা।
হিসাববিজ্ঞান ব্যবস্থাপনাকে ব্যবসার সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে সাহায্য করে এবং আর্থিক অবস্থান সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

হিসাববিজ্ঞান এর জনক কে
হিসাববিজ্ঞানের জনক হিসেবে লুকা পাসিওলি (Luca Pacioli) কে গণ্য করা হয়। তিনি একজন ইতালিয়ান গণিতবিদ এবং ফ্রান্সিসকান সন্ন্যাসী ছিলেন। ১৪৯৪ সালে তিনি "Summa de Arithmetica, Geometria, Proportioni et Proportionalità" নামক একটি বই প্রকাশ করেন, যার মধ্যে দ্বৈত এন্ট্রি পদ্ধতি (Double-entry bookkeeping) সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়। এই পদ্ধতিটি আধুনিক হিসাববিজ্ঞানের ভিত্তি হিসেবে পরিচিত এবং এটি অর্থনৈতিক লেনদেনের সঠিক নথিভুক্তকরণ এবং বিশ্লেষণ সহজতর করে।
পাসিওলির এই অবদান হিসাববিজ্ঞানে মৌলিক পরিবর্তন এনেছিল এবং আজকের আধুনিক হিসাববিজ্ঞানের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। এজন্যই তাকে "হিসাববিজ্ঞানের জনক" বলা হয়।
হিসাব বিজ্ঞান কত প্রকার
হিসাববিজ্ঞানকে প্রধানত কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত হিসাববিজ্ঞান নিম্নলিখিত প্রকারভেদে বিভক্ত:
১. আর্থিক হিসাববিজ্ঞান (Financial Accounting):
এটি মূলত একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা এবং কার্যক্রম সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করে। আর্থিক হিসাববিজ্ঞানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লাভ-ক্ষতি, সম্পদ-দায়, এবং মূলধনের বিবরণ তৈরি করা হয়। এই হিসাব সাধারণত বাহ্যিক ব্যবহারকারীদের, যেমন বিনিয়োগকারী, ঋণদাতা, এবং কর কর্তৃপক্ষের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
২. ব্যবস্থাপনা হিসাববিজ্ঞান (Management Accounting):
ব্যবস্থাপনা হিসাববিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রস্তুত করা হয়। এটি ব্যবস্থাপনাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরিকল্পনা এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সাহায্য করে। এই ধরনের হিসাববিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কৌশল ও বাজেট নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. খরচ হিসাববিজ্ঞান (Cost Accounting):
খরচ হিসাববিজ্ঞান উৎপাদন এবং সেবার খরচ নির্ধারণ ও বিশ্লেষণ করে। এটি উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ের খরচ নিয়ন্ত্রণ ও বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়, যার ফলে উৎপাদনের দক্ষতা বাড়ানো যায়।
৪. কর হিসাববিজ্ঞান (Tax Accounting):
কর হিসাববিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কর সংক্রান্ত লেনদেন নির্ধারণ এবং কর রিপোর্টিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি কর সম্পর্কিত আইন এবং নিয়মাবলী মেনে কর প্রস্তুতি এবং প্রদান নিশ্চিত করে।
৫. ফরেনসিক হিসাববিজ্ঞান (Forensic Accounting):
ফরেনসিক হিসাববিজ্ঞান প্রতারণা, অনিয়ম বা আর্থিক জালিয়াতি তদন্তের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত আইনি প্রক্রিয়ায় আর্থিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে অপরাধ তদন্তে সাহায্য করে।
৬. সরকারি হিসাববিজ্ঞান (Government Accounting):
এটি সরকারি সংস্থাগুলোর আর্থিক লেনদেন এবং বাজেটিং পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়। সরকারি সংস্থাগুলো করদাতাদের তহবিলের সঠিক ব্যবহারের জন্য এই হিসাববিজ্ঞান অনুসরণ করে।
এই বিভিন্ন প্রকারের হিসাববিজ্ঞান বিভিন্ন প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন ও তথ্য পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।
0 Comments