সূরা মুজাম্মিল- উচ্চারণ, অনুবাদ ও ব্যাখ্যা

 সূরা মুজাম্মিল- উচ্চারণ, অনুবাদ ও ব্যাখ্যা



সূরার নাম : আল-মুযযাম্মিল

অর্থ : চাদরাবৃত

সূরা নং : ৭৩

রুকু : 

আয়াত: ২০

সিজদা: ০

শব্দ:

পারা : ২৯

অক্ষর:

মক্কায় অবতীর্ণ

بِسْمِاللّهِالرَّحْمـَنِالرَّحِيمِ

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়অতি দয়ালু।

নং

আরবি

উচ্চারণ

অনুবাদ

يَاأَيُّهَاالْمُزَّمِّلُ

ইয়া আইয়্যুহাল্ মুয্যাম্মিলু

হে চাদরআবৃত!

قُمِاللَّيْلَإِلَّاقَلِيلًا

কুমিল্লাইলা ইল্লা-ক্বলীলা-

রাতে সালাতে দাঁড়াও কিছু অংশছাড়া।

نِصْفَهُأَوِانْقُصْمِنْهُقَلِيلًا

নিছ্ফাহূ আওয়িনক্বুছ মিনহুক্বলীলা-

রাতের অর্ধেক কিংবা তার চেয়েকিছুটা কম।

أَوْزِدْعَلَيْهِوَرَتِّلِالْقُرْآنَتَرْتِيلًا

আওযিদ্ ‘আলাইহি অরত্তিলিল্কুরআ-না তারতিলা

অথবা তার চেয়ে একটু বাড়াও। আরস্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কুরআন আবৃত্তি কর।

إِنَّاسَنُلْقِيعَلَيْكَقَوْلًاثَقِيلًا

ইন্না-সানুলক্বী ‘আলাইকাক্বওলান্ ছাক্বীলা-।

নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি একঅতিভারী বাণী নাযিল করছি।

إِنَّنَاشِئَةَاللَّيْلِهِيَأَشَدُّوَطْئًاوَأَقْوَمُقِيلًا

ইন্না না-শিয়াতাল লাইলি হিইয়াআশাদ্দু ওয়াতয়াঁও অআক্বওয়ামু ক্বীলা-।

নিশ্চয় রাত-জাগরণ আত্মসংযমেরজন্য অধিকতর প্রবল এবং স্পষ্ট বলার জন্য অধিকতর উপযোগী।

إِنَّلَكَفِياَلنَّهَارِسَبْحًاطَوِيلًا

ইন্না-লাকা ফিন্নাহা-রিসাব্হান্ ত্বোয়াওয়ীলা-।

নিশ্চয় তোমার জন্য দিনের বেলায়রয়েছে দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা।

وَاذْكُرِاسْمَرَبِّكَوَتَبَتَّلْإِلَيْهِتَبْتِيلًا

ওয়াযকুরিছমা রব্বিকাঅতাবাত্তাল্ ইলাইহি তাব্তীলা-।

আর তুমি তোমার রবের নাম স্মরণকর এবং একাগ্রচিত্তে তাঁর প্রতি নিমগ্ন হও।

رَبُّالْمَشْرِقِوَالْمَغْرِبِلَاإِلَهَإِلَّاهُوَفَاتَّخِذْهُوَكِيلًا

রব্বুল্ মাশরিকি ওয়াল মাগরিবিলা ইলা-হা ইল্লা-হুওয়া ফাত্তাখিয্হু অক্বীলা-।

তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের রবতিনিছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। সুতরাং তাঁকেই তুমি কার্য সম্পাদনকারীরূপে গ্রহণ কর।

১০

وَاصْبِرْعَلَىمَايَقُولُونَوَاهْجُرْهُمْهَجْرًاجَمِيلًا

ওয়াছবির ‘আলা-মা-ইয়াকুলূনাওয়াহজুর হুম্ হাজরান জ্বামীলা-।

আর তারা যা বলেতাতে তুমিধৈর্য ধারণ কর এবং সুন্দরভাবে তাদেরকে পরিহার করে চল।

১১

وَذَرْنِيوَالْمُكَذِّبِينَأُولِيالنَّعْمَةِوَمَهِّلْهُمْقَلِيلًا

ওযারনীওয়ালমুকাযযিবীনা উলিন না’মাতি ওয়ামাহহিলহুম ক্বলীলা-।

আর ছেড়ে দাও আমাকে এবং বিলাসসামগ্রীর অধিকারী মিথ্যারোপকারীদেরকে। আর তাদেরকে কিছুকাল অবকাশ দাও।

১২

إِنَّلَدَيْنَاأَنْكَالًاوَجَحِيمًا

ইন্না-লাদাইনা আন্কা-লাঁওঅজ্বাহীমাঁ- ।

নিশ্চয় আমার নিকট রয়েছেশিকলসমূহ ও প্রজ্জ্বলিত আগুন।

১৩

وَطَعَامًاذَاغُصَّةٍوَعَذَابًاأَلِيمًا

ওয়াত্বায়ামান যা গুছছাতিও ওয়া আযাবান আলিমা।

ও কাঁটাযুক্ত খাদ্য এবংযন্ত্রাদায়ক শাস্তি।

১৪

يَوْمَتَرْجُفُالْأَرْضُوَالْجِبَالُوَكَانَتِالْجِبَالُكَثِيبًامَهِيلًا

ইয়াওমা র্তাজুফুল্ র্আদুঅল্জ্বিবা-লু অকা-নাতিল্ জ্বিবা-লু কাছীবাম্ মাহীলা-।

যেদিন যমীন ও পর্বতমালাপ্রকম্পিত হবে এবং পাহাড়গুলো চলমান বালুকারাশিতে পরিণত হবে।

১৫

إِنَّاأَرْسَلْنَاإِلَيْكُمْرَسُولًاشَاهِدًاعَلَيْكُمْكَمَاأَرْسَلْنَاإِلَىفِرْعَوْنَرَسُولًا

ইন্না র্আসাল্ না ইলাইকুম্রসূলান্ শা-হিদান্ ‘আলাইকুম্ কামা  র্আসাল্না  ইলা- র্ফি‘আ‘উনা রসূলা-।

নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্যস্বাক্ষীস্বরূপ তোমাদের কাছে রাসূল পাঠিয়েছি যেমনিভাবে ফিরআউনের কাছে রাসূলপাঠিয়েছিলাম।

১৬

فَعَصَىفِرْعَوْنُالرَّسُولَفَأَخَذْنَاهُأَخْذًاوَبِيلًا

ফা‘আছোয়া- র্ফি‘আউর্নু রসূলাফাআখয্না-হু আখ্যাঁও অবীলা-।

কিন্তু ফিরআউন রাসূলকে অমান্যকরল। তাই আমি তাকে অত্যন্ত শক্তভাবে পাকড়াও করলাম।

১৭

فَكَيْفَتَتَّقُونَإِنْكَفَرْتُمْيَوْمًايَجْعَلُالْوِلْدَانَشِيبًا

ফাকাইফা তাত্তাকুনা ইন্কাফারতুম্ ইয়াওমাইঁ ইয়াজ্ব ‘আলুল্ ওয়িল্দা-না শীবা-।

অতএব তোমরা যদি কুফরি করতাহলেতোমরা সেদিন কিভাবে আত্মরক্ষা করবে যেদিন কিশোরদেরকে বৃদ্ধে পরিণত করবে।

১৮

السَّمَاءُمُنْفَطِرٌبِهِكَانَوَعْدُهُمَفْعُولًا

আসসামা-য়ু মুন্ফাত্বিরুম্বিহ্কা-না ওয়া’দুহূ মাফ্‘ঊলা-।

যার কারণে আসমান হবে বিদীর্ণআল্লাহর ওয়াদা হবে বাস্তবায়িত।

১৯

إِنَّهَذِهِتَذْكِرَةٌفَمَنْشَاءَاتَّخَذَإِلَىرَبِّهِسَبِيلًا

ইন্না হা-যিহী তায্ কিরতুন্ফামান্ শা-য়া ত্তাখাযা ইলা-রব্বিহী সাবীলা-।

নিশ্চয় এ এক উপদেশ। অতএব যে চায়সে তার রবের দিকে পথ অবলম্বন করুক।

 

إِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُومُ أَدْنَى مِنْ ثُلُثَيِ اللَّيْلِ وَنِصْفَهُ وَثُلُثَهُ وَطَائِفَةٌ مِنَ الَّذِينَ مَعَكَ وَاللَّهُ يُقَدِّرُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ عَلِمَ أَنْ لَنْ تُحْصُوهُ فَتَابَ عَلَيْكُمْ فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ عَلِمَ أَنْ سَيَكُونُ مِنْكُمْ مَرْضَى وَآخَرُونَ يَضْرِبُونَ فِي الْأَرْضِ يَبْتَغُونَ مِنْ فَضْلِ اللَّهِ وَآخَرُونَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنْفُسِكُمْ مِنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِنْدَ اللَّهِ هُوَ خَيْرًا وَأَعْظَمَ أَجْرًا وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ

উচ্চারণ: ইন্না রব্বাকা ইয়া’লামু আন্নাকাতাকুমু আদ্না-মিন্ ছুলুছায়িল্লাইলি অনিছ্ফাহূ অ ছুলুছাহূ অত্বোয়া-য়িফাতুম্মিনাল্লাযীনা মা‘আক্অল্লা-হু ইয়ুক্বদ্দিরুল্ লাইলা অন্নাহার্-; ‘আলিমা আল্লান্তুহ্ছূহু ফাতা-বা ‘আলাইকুম্ ফাকরায়ূ মা-তাইয়াস্সারা মিনাল্ কুরআ-ন্; ‘আলিমা আন্সাইয়াকূনু মিন্কুম্ র্মাদ্বোয়া অআ-খরূনা ইয়াদ্ব্রিবূনা ফিল্ র্আদ্বি ইয়াব্তাগূনামিন্ ফাদ্ব্লিল্লা-হি অআ-খরূনা ইয়ুক্ব-তিলূনা ফী সাবীলিল্লা-হি ফাক্ব্রায়ূমা-তাইয়াস্সার মিন্হু অআক্বীমুছ্ ছলা-তা অআ-তুয্ যাকা-তা অআকরিদ্বুল্লা-হার্কাদ্বোয়ান্ হাসানা-অমা-তুক্বাদ্দিমূ লিআন্ফুসিকুম্ মিন্ খইরিন্ তাজ্বিদূহু ‘ইন্দাল্লা-হি হুওয়া খইরঁও অআ’জোয়ামা আজর-অস্তাগ্ফিরুল্লা-হ্ইন্নাল্লা-হাগফূর্রু রহীম্।

অনুবাদ: নিশ্চয় তোমার রব জানেন যেতুমিরাতের দুই তৃতীয়াংশের কিছু কমঅথবা অর্ধরাত অথবা রাতের এক তৃতীয়াংশ সালাতেদাঁড়িয়ে থাক এবং তোমার সাথে যারা আছে তাদের মধ্য থেকে একটি দলও। আর আল্লাহ রাত ওদিন নিরূপণ করেন। তিনি জানেন যেতোমরা তা করতে সক্ষম হবে না। তাই তিনি তোমাদেরকেক্ষমা করলেন। অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়। তিনি জানেন তোমাদেরমধ্যে কেউ কেউ অসুস্ত হয়ে পড়বে। আর কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে পৃথিবীতেভ্রমণ করবেআর কেউ কেউ আল্লাহর পথে লড়াই করবে। অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকুসহজ ততটুকু পড়। আর সালাত কায়েম করযাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। আরতোমরা নিজদের জন্য মঙ্গলজনক যা কিছু আগে পাঠাবে তোমরা তা আল্লাহর কাছে পাবেপ্রতিদান হিসেবে উৎকৃষ্টতর ও মহত্তর রূপে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও।নিশ্চয় আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীলপরম দয়ালু।

সুরা মুজাম্মিলের ব্যাখ্যা:

আল্লাহ তাঁর রসূলকে আবৃত করা বন্ধ করার নির্দেশ দেন এবং এর অর্থ হল রাত্রি ঢেকে রাখা। তিনি তাকে উঠতে এবং তার প্রভুর কাছে প্রার্থনায় দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। এটা যেমন আল্লাহ বলেন, “তাদের পাশ তাদের শয্যা পরিত্যাগ করেভয়ে ও আশায় তাদের পালনকর্তাকে ডাকতে এবং আমি তাদের যা দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। এভাবেরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযের জন্য দাঁড়ানোর মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করলেন। এটি কেবল তার উপরই ওয়াজিব ছিলযেমন আল্লাহ বলেছেন, “আর রাতের কিছু অংশে এর সাথে (কোরআন) সালাত আদায় করুনআপনার জন্য অতিরিক্ত সালাত হিসাবে। হতে পারে তোমার রব তোমাকে মাকামে মাহমুদে উঠাবেন।" (১৭:৭৯) এখানে আল্লাহ ব্যাখ্যা করেছেন তার কতটা নামায পড়া উচিত। আল্লাহ বলেন, “হে চাদরাবৃ্ত ব্যক্তি! একটু বাদে সারা রাত দাঁড়াও।" ইবনে আব্বাসআদ-দাহহাক এবং আস-সুদ্দি সবাই বললেন, "হে গুটিয়ে নেওয়া!" "এর মানেহে ঘুমন্ত লোকেরা।" কাতাদাহ বলেন, "যে তার কাপড়ে মুড়ে আছে।" (আত-তাবারী ২৩:৬৭৭আল্লাহর উক্তি সম্পর্কে, "এর অর্ধেক" অর্থ পুরো রাতের পরিবর্তে। "এর থেকে একটু কমবা একটু বেশি।" অর্থ, ‘আমরা তোমাকে নির্দেশ দিয়েছি অর্ধেক রাত্রি নামাযে দাঁড়াতেহয় তার চেয়ে একটু বেশি হোক বা একটু কম। এতে (সামান্য বৃদ্ধি বা হ্রাস) তোমাদের উপর কোন অসুবিধা নেই।

কুরআন তেলাওয়াতের পদ্ধতি

এ সম্পর্কে আল্লাহর বাণী, “ধীরে ধীরে তিলাওয়াত করুনকারণ এটি কুরআনকে বুঝতে এবং তা চিন্তা করতে সাহায্য করবে। এভাবেই তিলাওয়াত করতেন নবীজী। আয়েশা (রাঃ) বলেন, “তিনি (রাসূল) অধ্যায়টি ধীরে ধীরে পাঠ করতেনএত বেশি যে তা তার চেয়ে দীর্ঘ অধ্যায়ের চেয়ে দীর্ঘ হতো। (মুসলিম ১:৫০৭)

সহীহ আল-বুখারীতেআনাস (রাঃ) থেকে লিপিবদ্ধ আছে যেতাঁকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তিলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলতিনি উত্তর দিলেন, "তিনি হরফগুলিকে লম্বা করতেন।" তারপর তিনি (আনাস) পাঠ করলেন, "পরম করুণাময়পরম করুণাময় আল্লাহর নামে।" (১:১) এবং তিনি "আল্লাহর নামে" প্রসারিত করেছেন এবং তিনি "পরম করুণাময়" এবং তিনি "পরম করুণাময়" দীর্ঘ করেছেন। (ফাতহুল বারী ৮:৭০৯)

ইবনে জুরায়জ ইবনে আবি মুলায়কা থেকে বর্ণনা করেছেনতিনি উম্মে সালামা থেকে বর্ণনা করেছেন যে তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তিলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলতখন তিনি বললেন, “তিনি তার তেলাওয়াতে বিরতি দিতেনআয়াত দ্বারা। শ্লোক “আল্লাহর নামেযিনি পরম করুণাময়পরম করুণাময়। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরযিনি বিদ্যমান সবকিছুর পালনকর্তা। পরম করুণাময়পরম করুণাময়। প্রতিদান দিবসের একমাত্র মালিক।" (১:১-৪) এটি আহমদআবু দাউদ এবং আত-তিরমিযী দ্বারা লিপিবদ্ধ হয়েছে। (আহমদ ৬:৩০২, আবু দাউদ ৪:২৯৪, এবং তুহফাত আল-আহওয়াদী ৮:২৪১) আমরা ইতিমধ্যেই হাদীসগুলি উল্লেখ করেছি যা এই তাফসিরের শুরুতে তেলাওয়াত করার সময় ধীর ছন্দময় তেলাওয়াত এবং কণ্ঠকে সুন্দর করার সুপারিশ প্রমাণ করে। যেমন হাদীসে বলা হয়েছে, "তোমার কণ্ঠস্বর দিয়ে কুরআনকে সুন্দর কর।" (ফাতহুল বারী ১৩:৫২৭)

এবং হাদিস, "সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় যে কুরআন তেলাওয়াতের সাথে সুন্দরভাবে জপ করে না।" (ফাতহুল বারী ১৩:৫১০)

এবং হাদিস, "নিশ্চয়ই তাকে দাউদ পরিবারের বায়ুর নালী থেকে এই বায়ুপ্রবাহ দেওয়া হয়েছে।" (ফাতহ আল-বারী ৮:৭১০) আবু মুসাকে উল্লেখ করে। আবূ মূসা (রাঃ) বললেনযদি আমি জানতাম যেতুমি আমার তিলাওয়াত শুনছতাহলে আমি তা সত্যিই তোমার জন্য সুন্দর করে দিতাম। ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত হয়েছে যেতিনি বলেছেন, “কুরআনকে (তিলাওয়াত) বালির বিচ্ছুরণের মতো ছড়িয়ে দিও না এবং তাড়াহুড়ো করে কবিতা পাঠের মতো তাড়াহুড়ো করো না। এর আশ্চর্যজনক অংশগুলিতে থামুন এবং এটির সাথে আপনার হৃদয়কে সরান। তোমাদের কেউ যেন তার উদ্বেগকে অধ্যায়ের শেষ পর্যন্ত না পৌঁছায়।" এটি আল-বাঘাভি দ্বারা রেকর্ড করা হয়েছে। (মাম আত-তানযিল ৮:২১৫) আল-বুখারী আবি ওয়াইল থেকে লিপিবদ্ধ করেছেন যে তিনি বলেছেন, “এক ব্যক্তি ইবনে মাসউদের কাছে এসে বলল, 'আমি গত রাতে মুফাস্সাল অধ্যায় (কাফ থেকে আন-নাস পর্যন্ত) পড়েছি। ইবন মাসউদ বলেন, 'এটা কবিতা পাঠের তাড়াহুড়ার মতো তাড়াহুড়ো করছে। আমি নিশ্চয়ই জানি যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মধ্যে একত্রিত করতেন (নামাজে)।’ তারপর তিনি মুফাস্সাল অধ্যায় থেকে বিশটি অধ্যায় উল্লেখ করলেন এবং বললেন যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক নামাযে দু’টি করে পড়তেন। (ফাতহুল বারী ২:২৯৮)

কুরআনের মহিমা

অতঃপর আল্লাহ বললেন, “নিশ্চয়ই আমরা তোমার প্রতি একটি বাণী নাযিল করব। আল হাসান ও কাতাদাহ উভয়েই বলেন, "এর সাথে আমল।" আরও বলা হয়েছে যে এর অর্থ এটির বিশালতার কারণে এটি প্রকাশের সময় ভারী হবে। এটি যায়েদ বিন সাবিত (রা) এর মতই। তিনি বলেনআল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার উরুর উপরে থাকা অবস্থায় কিছু ওহী পেয়েছিলেন এবং এর কারণে আমার উরু প্রায় চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। (ফাতহুল বারী ৮:১০৮)

ইমাম আহমাদ আবদুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণনা করেছেন যেতিনি বলেনআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলামহে আল্লাহর রাসূল! যখন ওহী আসে তখন তুমি কি কিছু অনুভব কর?’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন,

আমি একটি রিং শুনতে পাই এবং তারপর যখন এটি ঘটে তখন আমি চুপ থাকি। আমার কাছে এমন একটি বারও ওহী আসেনি যে আমি ভেবেছিলাম যে আমার আত্মা (মৃত্যু) হতে চলেছে।" (আহমদ ২:২২২)

এ বর্ণনায় আহমদ একাই ছিলেন। সহীহ আল-বুখারীর শুরুতে আয়েশা (রাঃ) থেকে লিপিবদ্ধ আছে যেআল হারিস বিন হিশাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "আপনার কাছে ওহী কিভাবে আসে?" রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন,"কখনও কখনও এটি আমার কাছে ঘণ্টার বাজানোর মতো আসে এবং এটি আমার জন্য সবচেয়ে গুরুতর। অতঃপর যা অনুপ্রাণিত হয় তা উপলব্ধি করার পর এই অবস্থা আমার কাছ থেকে চলে যায়। কখনও কখনও ফেরেশতা একজন মানুষের আকারে আমার কাছে আসে এবং আমার সাথে কথা বলে এবং সে যা বলে আমি তা উপলব্ধি করি।"

আয়েশা আরো বলেন, "সত্যিইআমি তাকে ওহী পেতে দেখেছি এবং আমি ওহী শেষ হওয়ার সাথে সাথে খুব ঠান্ডা দিনে তার কপাল থেকে ঘাম ঝরতে দেখেছি।" এটি আল-বুখারী কর্তৃক লিপিবদ্ধ শব্দ। (ফাতহ আল-বারী 1:25) ইমাম আহমাদ আয়েশা থেকে লিপিবদ্ধ করেছেন যে তিনি বলেছেন, "আল্লাহর রসূল যদি তাঁর সওয়ারী পশুতে থাকা অবস্থায় কোন ওহী পেয়ে থাকেন তবে এটি তার জিরানকে তীব্রভাবে চলতে শুরু করবে।" (আহমদ ৬:১১৮) জিরান হল ঘাড়ের নীচে। ইবনে জারীর ব্যাখ্যাটি বেছে নিয়েছিলেন যে এটি (ওহী) একই সাথে উভয় উপায়ে ভারী। এটি আবদুর-রহমান বিন জায়েদ বিন আসলাম যেমন বলেছেন, "এই পৃথিবীতে এটি যেমন ভারীবিচারের দিন দাঁড়িপাল্লায়ও ভারী হবে।"

রাতে নামাজের জন্য দাঁড়ানোর ফজিলত

আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই রাতে উঠা (নাশিয়া) বোঝার জন্য উত্তম এবং বক্তৃতা (তিলাওয়াতের) জন্য অধিক উপযোগী”। উমরইবনে আব্বাস এবং ইবনে জুবায়েরসবাই বললেন, "পুরো রাতই নাশিয়াহ।" (আত-তাবারী ২৩:৬৮৩) মুজাহিদ এবং অন্যরা একই কথা বলেছেন। (আত-তাবারী ২৩:৬৮২) যখন একজন ব্যক্তি রাতে নামাজের জন্য দাঁড়ায় তখন এটিকে "নাশাবলা হয়। মুজাহিদ থেকে এক বর্ণনায় তিনি বলেছেন, “(এটি) ইশার (নামাযের) পরে।” (আত-তাবারী ২৩:৬৮২) এটি আবু মিজলাজকাতাদাহসালিমআবু হাযিম এবং মুহাম্মাদ বিন আল-মুনকাদিরও বলেছেন। (আত-তাবারী ২৩:৬৮৩) মোদ্দা কথা হল যে রাতের নাশিয়াহ তার সময় এবং সময়কে বোঝায়এর প্রতিটি ঘন্টাকে নাশিয়াহ বলা হয়তাই এটি সময়কালকে নির্দেশ করে।

এর উদ্দেশ্য হল যেরাতে (নামাযের জন্য) দাঁড়ানো হৃদয় ও জিহ্বাকে প্রশিক্ষণের জন্য উত্তম এবং তেলাওয়াতের জন্য আরও উপযোগী। তাইআল্লাহ বলেন, "বোঝার জন্য উত্তম এবং কথা বলার জন্য অধিকতর উপযোগী।" অর্থতেলাওয়াত সম্পাদনের ক্ষেত্রে আরও বিস্তৃত এবং দিনের তেলাওয়াতের চেয়ে এটি বোঝার জন্য আরও ভাল। এর কারণ হল দিনের সময় হল মানুষের ছত্রভঙ্গ হওয়ার এবং চলাফেরা করারকণ্ঠস্বর উত্থাপন করার এবং প্রাণবন্ত হওয়ার সময়।

আল-হাফিজ আবু ইয়ালা আল-মাওসিলি বলেছেন, “ইব্রাহিম বিন সাইদ আল-জাওহারী আমাদেরকে বলেছেন যে আবু উসামা আমাদেরকে বলেছেন যে আল-আমাশ আমাদেরকে জানিয়েছেন যে আনাস বিন মালিক এই আয়াতটি পাঠ করেছেন: “নিশ্চয়ই রাত্রি জাগরণ বোঝার জন্য উত্তম। বক্তৃতার জন্য আরও সঠিক।" তখন এক ব্যক্তি তাকে বলল, ‘আমরা তা পাঠ করি; (বক্তব্যের জন্য অধিক উপযোগী)।তখন আনাস তাকে বললেন, 'সবচেয়ে সঠিক (আসওয়াব)সবচেয়ে উপযোগী (আকওয়াম)প্রস্তুতির জন্য সর্বোত্তম (আহিয়া') এবং অনুরূপ শব্দগুলো সবই একই (অর্থে)।মুসনাদে আবু ইয়ালা ৭:৮৮)

এভাবে আল্লাহ তায়ালা বলতে থাকেন, “নিশ্চয়ই দিনটি আপনার জন্য দীর্ঘ সাবহ্”। ইবনে আব্বাসইকরিমা এবং আতা ইবনে আবি মুসলিম সবাই বললেনঅবসর সময় এবং ঘুম। (আত-তাবারী ২৩:৬৮৬, এবং আল-কুরতুবি ১৯:৪২) আবু আল-আলিয়ামুজাহিদআবু মালিকআদ-দাহহাকআল-হাসানকাতাদাহআর-রাবি বিন আনাস এবং সুফিয়ান আত-সাওরিসবাই বলেছেন, "অনেক অবসর সময়।" কাতাদাহ বলেনঅবসরআকাঙ্খা ও কর্মকাণ্ড। আবদুর-রহমান বিন জায়েদ বিন আসলাম উক্ত বক্তব্য সম্পর্কে বলেন, “নিশ্চয়ই আপনার জন্য দিনটি দীর্ঘ সাবহ্”। “এর মানে আপনার প্রয়োজনের জন্য। অতএবআপনার ধর্মীয় ভক্তির জন্য রাতটি খোলা রাখুন। আল্লাহ একথা বলেছেন যখন (স্বেচ্ছায়) রাতের নামায ফরজ ছিল। অতঃপরআল্লাহ তাঁর বান্দাদের আশীর্বাদ করলেনবিষয়টিকে হালকা করলেন এবং এর বাধ্যবাধকতা সরিয়ে দিলেন।" তারপর তিনি তিলাওয়াত করলেন, “সারা রাত (নামাযের জন্য) দাঁড়াওসামান্য ব্যতীত”। আয়াতের শেষ পর্যন্ততারপর তিনি তিলাওয়াত করলেন, "নিশ্চয়ইআপনার পালনকর্তা জানেন যে আপনি রাতের দুই তৃতীয়াংশের কম বা অর্ধেক দাঁড়িয়ে থাকেন।" (৭৩:২০) যতক্ষণ না সে পৌঁছে গেল, "সুতরাং এর থেকে যা সহজ তা পাঠ কর।" (৭৩:২০) এবং আল্লাহ বলেন, "এবং রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ (এর সাথে সালাতও আদায় করুন)আপনার জন্য অতিরিক্ত প্রার্থনা হিসাবে। হতে পারে তোমার রব তোমাকে মাকামে মাহমুদে উঠাবেন।" (১৭:৭৯) প্রকৃতপক্ষেতিনি (আব্দুর-রহমান) যা বলেছেন এটি ততটাই সত্য।

এই মতের প্রমাণ হল ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে লিপিবদ্ধ করেছেন যেসাইদ বিন হিশাম তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন এবং তারপর তার কাছে থাকা কিছু সম্পত্তি বিক্রি করার জন্য আল-মদীনায় গমন করেছিলেন। তিনি এর অর্থ একটি পশু এবং একটি অস্ত্র কেনার জন্য ব্যবহার করতে চান এবং তারপরে তিনি মারা না যাওয়া পর্যন্ত রোমানদের বিরুদ্ধে জিহাদে যেতে চান। এই প্রক্রিয়ায় তিনি তার সম্প্রদায়ের একদলের সাথে সাক্ষাত করলেন এবং তারা তাকে অবহিত করলেন যে তার সম্প্রদায়ের ছয়জনের একটি দল উদ্দেশ্য করেছিল যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে তিনি বলেন, "তোমাদের জন্য কি আমার মধ্যে একটি চমৎকার উদাহরণ নেই?"

তাই তিনি তাদেরকে তা থেকে নিষেধ করলেন এবং তাদেরকে সাক্ষ্য দিলেন যে তারা তাদের স্ত্রীদের ফিরিয়ে নেবে। অতঃপর তিনি (সাঃ) আমাদের কাছে ফিরে এসে আমাদের জানান যেতিনি ইবনে আব্বাসের কাছে গিয়েছিলেন এবং তাঁকে বিতর (নামাজ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেনআমি কি তোমাদেরকে সেই ব্যক্তি সম্পর্কে অবহিত করব না যিনি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী ব্যক্তি আল্লাহর রাসূলের বিতর নামায সম্পর্কেসে হ্যাঁ বলেছে." তখন ইবনে আব্বাস বললেনআয়েশা (রাঃ)-এর কাছে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস করতারপর আমার কাছে ফিরে যাও এবং সে তোমাকে যা বলে তা আমাকে জানাও।

তিনি বলেন, “অতঃপর আমি হাকিম বিন আফলাহর কাছে গেলাম এবং তাকে আমার সাথে তার কাছে যেতে অনুরোধ করলাম। কিন্তু তিনি বলেন, ‘আমি তার কাছে থাকতে চাই না। আমি তাকে এই দুই পক্ষের (আলী ও মুয়াবিয়ার দল) সম্পর্কে কিছু বলতে নিষেধ করেছিলামকিন্তু সে অস্বীকার করেছিল এবং তাদের সাথে (তাদের দ্বন্দ্বে) জড়িত ছিল।তাই আমি তাকে আল্লাহর কসম দিয়েছিলামতাই সে আমার সাথে এল এবং আমরা তার (তার বাড়িতে) প্রবেশ করলাম।" তাই তিনি বললেন, "এই কি সেই হাকিম যাকে আমি চিনি?" তিনি (হাকিম) বললেনহ্যাঁ। তারপর সে বললো, "এটি কে তোমার সাথে?" তিনি বললেনসাঈদ ইবনে হিশাম। সে বললহিশাম কেতিনি বললেনতিনি হলেন ইবনে আমির। তিনি তখন আল্লাহর কাছে তাঁর (আমীর)-এর প্রতি রহমত কামনা করেন। তারপর তিনি বললেনহ্যাঁআমির একজন সত্যিকারের মানুষ ছিলেন। অতঃপর আমি বললাম, “হে মুমিনদের মা! আমাকে আল্লাহর রাসূলের চরিত্র সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি উত্তর দিলেনআপনি কি কুরআন পড়েননিআমি বললাম, "অবশ্যই।" অতঃপর তিনি বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের চরিত্র ছিল কুরআন”। আমি দাড়িয়ে চলে যাচ্ছিলামকিন্তু তখন আমার মনে পড়ল রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রাতের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার কথা। আমি বললাম, “হে মুমিনদের মা! আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের সালাত সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেনতুমি কি সূরাটি পড়নি, (মুজাম্মিল) আমি বললাম, "অবশ্যই।" তখন তিনি বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ এই সূরার শুরুতে রাতে (নামাযের জন্য) দাঁড়ানো ফরজ করেছেন। তাই রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ সারা রাত (নামাজে) সারা বছর দাঁড়িয়ে ছিলেন যতক্ষণ না তাদের পা ফুলে যায়। আল্লাহ এই সূরার শেষ অবতীর্ণ বারো মাস আটকে রেখেছিলেন। অতঃপরআল্লাহ এই সূরার শেষে এই বোঝা হালকা করার কথা নাজিল করলেন। অতঃপর রাতের নামাযের জন্য দাঁড়ানো ওয়াজিব হওয়ার পর স্বেচ্ছায় হয়ে গেল।”

পোস্ট ট্যাগ:

Dawatul Islam,Dawatul Islam  Bangladesh,Definitions of dawatul islam,Dawatul Islam UK,দাওয়াতুল ইসলাম,দাওয়াতুল ইসলামের,দাওয়াতুল ইসলাম বাংলাদেশ,দাওয়াতুল ইসলাম ইউকে,বাংলা হাদিস,কোরআন ও হাদিসের আলোকে,কুরআন হাদিস বিষয়ক,কুরআন পাঠ,মানবজীবনে কুরআন হাদীস,কুরআনহাদিস ও বিজ্ঞান,বাংলা কুরআন ও হাদীস






Post a Comment

0 Comments